শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া নানা কৌশলে খেলাপি না দেখানো ঋণগুলোও এখন প্রকাশ্যে আসায় সেটা ক্রমাগত বাড়ছে। যেটা মোট ঋণের ত্রিশ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। অ্যাননটেক্স গ্রুপ, বেক্সিমকো, এস আলমসহ বড় বড় কোম্পানি নামে-বেনামে বড় অংকের ঋণ খেলাপি হয়েছে । শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অনেক ব্যবসায়ী গ্রুপের মালিক পলাতক। তাদের খেলাপি ঋণ কীভাবে আদায় করা যাবে সেটা অনিশ্চিত ।
বাংলাদেশে ২০০৯ সালে খেলাপি ঋণ ছিলো বাইশ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের জুনে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ এগার হাজার কোটি টাকা। আর ২০২৫ সালের জুন নাগাদ খেলাপি ঋণ গিয়ে ঠেকেছে পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকায়। অর্থাৎ একবছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে রেকর্ড পরিমাণে তিন লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যাচ্ছে, গত কয়েকমাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ পাঁচ লাখ ত্রিশ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে ছয় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সে হিসেবে মোট ঋণের তেত্রিশ শতাংশরও বেশি খেলাপি হয়ে গেছে। এই বিপুল খেলাপি ঋণে মোটাদাগে বড় কিছু সমস্যাও দেখা যাচ্ছে অর্থনীতিতে।
এক. এই বিশাল পরিমাণ টাকা আদায় হবে কি-না সেটা অনিশ্চিত।
দুই. যেসব ব্যাংক এসব ঋণ দিয়েছে সেই ব্যাংকগুলো ধুঁকছে। গ্রাহকদের টাকা ঋণ হিসেবে দিয়ে দেওয়ায় ব্যাংকের কাছে টাকা নেই। ফলে আমানতকারীরা তাদের টাকা পাচ্ছে না।
তিন. সামগ্রিকভাবে এটা অর্থনীতিতে একটা ক্ষতিকর ‘চেইন রিঅ্যাকশন’ তৈরি করেছে। ব্যাংকগুলো এখন বেরসরকারি খাতে ঋণ দিতে পারছে না। ফলে নতুন উদ্যোক্তা বা ব্যবসা সৃষ্টি কমে গেছে। কর্মসংস্থান কমে গিয়ে এর প্রভাব জনজীবনেও পড়ছে।
জনতা ব্যাংকের নিরাপত্তা তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, “এটার তো লোন আছে। সেজন্যই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে এখানে রাখছে। “এখানে আমাদের মূল কাজটা হলো যেন এখান থেকে কোনো মালামাল বের না হতে পারে। অথবা মালিকপক্ষ কোনো কিছু নিয়ে যেতে না পারে। অর্থাৎ যেখানে, যা আছে, সেভাবেই থাকবে।”
গত একবছরে রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে অনেক কিছুই ঘটেছে, যার ফলে দেশটির খেলাপি ঋণ হঠাৎ বেড়েছে।
অর্থনীতিবিদরা অবশ্য বলছেন, খেলাপি ঋণের চিত্র কমবেশি এরকমই ছিলো। কিন্তু সেটাকে এতোদিন সামনে আনা হয়নি অর্থাৎ প্রকৃত চিত্র ‘লুকিয়ে রাখা হয়েছিলো’। তবে এর বাইরেও খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির আরও কারণ আছে।
এক. শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ীদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। যাদের অনেকেরই বড় অংকের ঋণ আছে। যেমন বেক্সিমকো, এস আলম গ্রুপ, নাসা গ্রুপ ইত্যাদি। তাদের এখন ব্যবসা প্রায় নেই। ঋণের কিস্তিও দিচ্ছে না।
দুই. আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ নিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণে চাপ দেওয়া হচ্ছিলো বাংলাদেশ ব্যাংককে। সেটা অনুসরণ করতে গিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়ে যায়।
তিন. বেশ কিছু ঋণ আদালতের আদেশে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা যাচ্ছিলো না। পরে সেগুলোকেও খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু হয়।
চার. কিছু ব্যাংকে ‘ফরেনসিক অডিট’ করা হয়। এতে করে সেখানেও নতুন খেলাপি ঋণের তথ্য বেরিয়ে আসে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ -সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ব্যাংকে টাকা রাখে গ্রাহকরা। সেই টাকা থেকেই ঋণ দেওয়া হয়। এখন সেই ঋণ বিশাল অংকে খেলাপি হয়ে গেলে ব্যাংকের কাছে আর টাকা থাকে না। ফলে ব্যাংক গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, সবমিলিয়ে?ই একবছরে এই বৃদ্ধি ঘটেছে । বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে যেন ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমাতে পারে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
পলাতক অনেক গ্রাহক
রেকর্ড ছাড়িয়েছে খেলাপি ঋণ
- আপলোড সময় : ২৪-১০-২০২৫ ১০:০৫:৪৭ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ২৪-১০-২০২৫ ১০:০৫:৪৭ অপরাহ্ন
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ
স্টাফ রিপোর্টার